ইষ্টিকুটুম ফার্ম হাউজ। বেশ একটা মিষ্টি নাম। বার বার উচ্চারণ করতেও ভালো লাগে। আলিপুরদুয়ার থেকে প্রায় ২২ কি মি দূরে। গাড়ীতে ৩৫ - ৪০ মিনিটের পথ। এছাড়াও কাছের ষ্টেশন হামিলটনগঞ্জ (১২ কি মি দূরে) থেকেও আপনি যেতে পারেন। গাড়ীতে মিনিট ২০ লাগতে পারে। ঠিকানা ---- উত্তর পাটকাপাড়া, পাটকাপাড়া টি এস্টেট, আলিপুরদুয়ার।
দু চার দিনের ছুটির আমেজ কাটাতে হলে এখানে গেলে আপনার আকাঙ্খিত শান্তির খোজ পেলেও পেতে পারেন বলে আশা করি। প্রথমেই বলি নামকরনের সর্থকতা। ইষ্টিকুটুমের মানে কাঙ্খিত বা বাঞ্চিত অতিথি। তাই ইষ্টিকুটুমকে ইচ্ছাকুটুমও বলা যেতে পারে । তবে কুটুম কার ??? আপনি এখানে যাবেন প্রকৃতির কুটুম হয়ে। যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখতে পাবেন "ইষ্টিকুটুম" পাখি গাছের ডালে বসে তার নিজের সুরে আপনাকে অভর্থনা জানাচ্ছে। এ পাখি দেখতে যেমন সুন্দর, গলার আওয়াজও ততোধিক সুন্দর। আর প্রকৃতি যেন, তার নিস্তব্ধার ডালি নিয়ে বসে রয়েছে। চা বাগান লাগোয়া আপনার থাকবার জায়গা। প্রায় ৩০ - ৪০ পা দূরে কালজিনি নদী বয়ে চলেছে। ঘরে বসে থাকতে ইচ্ছা না করলে বেড়িয়ে পড়ুন। চা বাগানের মধ্যে দিয়ে সরু রাস্তা একটু এগুলেই পেয়ে যাবেন অজানা পাহাড় থেকে জন্ম নেওয়া কালজিনি নদী। বর্ষাকাল ছাড়া এ নদী যেন সুন্দরী মেয়ের মতো আপন মনে নাচতে নাচতে এগিয়ে চলেছে। জলে স্রোত রয়েছে সর্বত্র। তবে সব জায়গায় স্নান করবার মতন গভীরতা নেই। তাতে কি আছে ?? আপনি নদীতে নেমে আপনার কাপড় একটু ভেজাতে আনন্দই পাবেন। এত স্বচ্ছ জল বয়ে যেতে আপনি হয়ত কমই দেখেছেন। দূরে কোথাও আপনি দেখতে পাবেন কেউ জাল ফেলে মাছ ধরছে বা কেউ টানা জালে মাছ ধরছে। কাছে গিয়ে তাদের সঙ্গে আলাপ করলে মাছ রাখার থলিতে মাছ দেখাতে তারা একটুও কুন্ঠিত বোধ করবে না। দেখতে পাবেন " বোরোলি " মাছ , যা দেখতে ছোট হলেও স্বাদে অতুলনীয়। মনে হয় প্রকৃতি যেন একটু অবিচার করে শুধুমাত্র এসব অঞ্চলের মানুষের জন্য এই মাছ সৃষ্টি করেছেন।
এবার আসি ফার্ম হাউজের কথায়। এখানে কি গাছ নেই সেটা বলাই কঠিন। ফুল, ফল, সবজি, শৌখিন প্রভৃতি কত রকমের যে গাছ আছে সেগুলির সব নাম আমার দ্বারা লেখা সম্ভব হবে না। কমলালেবু, মোসুম্বি, সবেদা, কদবেল, কলা, বেল বাতাবিলেবু, কামরাঙ্গা ছাড়াও সাধারণ গাছ যেমন খেজুর, নারকেল, সুপাড়ি, আম, জাম, তাল, কাঠাল, বকফুল প্রভৃতি নানা ধরণের গাছে ভর্তি। রয়েছে নানা ধরনের ফুল গাছ যা গেলেই আপনার চোখে পরবে। বাগানের মধ্যেই রয়েছে দুটি দোলনা। সেখানে ইচ্ছা করলে গান গাইতে গাইতে দোলনাই চড়তে পারেন। পাশেই রয়েছে সবজি খেত। এদের তৈরি আলু, বেগুন, লঙ্কা, সিম, ফুলকপি, মূলো, কড়াইশুটি ইত্যাদি আর বিভিন্ন ধরনের শাক আপনি খেতে পাবেন দুপুরে বা রাত্রের খাবার মেনুতে। শীতকালে এলে যে কোনো ধরনের সব্জি আবদার করলে আপনি পেয়ে যাবেন। পেয়ে যাবেন শীতের সকালের খেজুরের রস বা চা প্রেমিকরা পেয়ে যাবেন যতবার ইচ্ছা লিকার বা দার্জিলিঙ স্বাদের চা। কেননা এখানকার কর্মীরা আপনাকে তাদের কুটুম হিসেবেই দেখবে আর আপনার সন্তুষ্টির জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। এদের পরিষবা এককথায় তুলনাহীন। খেতে পাবেন ফার্ম হাউজের পোষা গরুর দুধ বা হাসের ডিম। দেখতে পাবেন রাজহাস। আদর করে ঘাস খাওয়াতে পারবেন খাচায় থাকা খরঘোস বা গিনিপিককে। এখানে একটা কথা না বললে এ লেখা ত্রুটিপূর্ন হবে। সেটা হ'ল এই ফার্ম হাউজের মালিক শ্রী সুব্রত কুন্ডু মহাশয়ের কথা।তার আতিথিয়তার কোনো মাপকাঠি নেই। তিনি নিজে আপনার খাবার বা থাকার ব্যাপারে কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা বারবার খোঁজ নেবেন। তার ব্যক্তব্যে এটাই প্রকাশ পাবে যে আপনারা সেখানে হোটেলে থাকতে আসেননি। এসেছেন তাঁর কুটুম বা অতিথি হয়ে হোম ষ্টে-তে থাকতে। হোটেল আর এখানে থাকার মধ্যে এক বিরাট ফারাক রয়েছে।
রাতে রয়েছে অন্য এক উপলব্ধি। নিস্তব্ধতার আসল সংঙ্গা তখনই খুজে পাবেন । শুনবেন ঝিঝি পোকার আওয়াজ বা আপনার কাছের কোনো গাছেতে বসে থাকা পেঁচার ডাক। যদি আপনার কপাল ভালো থাকে , তবে হাতির পাল জঙ্গল থেকে নদী পেরিয়ে চা বাগানের ভেতর দিয়ে ধানের জমিতে ধান খেতে আসতে দেখতে পারেন। এতে আপনি ভয় পাবেন না আনন্দ পাবেন সেটা আপনার নিজের ব্যাপার। তাই সন্ধ্যায় অন্ধকার নেমে এলে ফার্ম হাউজের সীমানার বাইরে না যাওয়াই ভালো।
এখান থেকে বেশ কয়েকটা ছোটখাটো টুরও করে নিতে পারেন। যেমন ----- চিলাপাতা ফরেষ্ট, জলদাপাড়া ফরেষ্ট, রায়মাটাং, টোটোপাড়া, জয়ন্তী, বক্সা ফোর্ট, সন্ত্রাবাড়ি, খয়েরবাড়ি, সিকিয়াঝোড়া, ভুটানঘাট, ফুনশিলিং, কোচবিহার প্রভৃতি। এসবের ব্যবস্থা বা গাড়ির বন্দোবস্ত সুব্রত বাবুকে বললেই করে দেবেন। তাই হাতে দু চার দিন নিয়ে আসলে এক ঢিলে অনেকগুলো পাখিই মারতে পারবেন। এসে একবার নিজেই যাচাই করে যান ..... শহরে থাকার একঘেয়েমি থেকে, শহরে থাকার ক্লান্তি থেকে .... সত্যিই ঐ কটা দিনের জন্য শান্তির স্বাদ পান কিনা ??