Friday, 7 January 2022

সোনামুখীর স্বর্নময়ী মা

 


সোনামুখীর স্বর্নময়ী মা


বাঁকুড়া জেলার প্রাচীন পৌর শহরগুলির মধ্যে অন্যতম শহর হ'ল সোনামুখী। এই শহরের মাঝখানে দেবী স্বর্ণমুখী বা সুবর্ণমুখী বা স্বর্নময়ী মা-এর মন্দির।  স্থানীয় লোকেদের বিশ্বাস এই দেবীর নাম অনুসারে এই অঞ্চলের নাম  হয়েছে সোনামুখী।


ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় যে বহু যুগ আগে এই অঞ্চলে বর্গী আক্রমণ থেকে বাঁচতে শক্তিরুপে কালীপুজোর আরাধনা করা হত। বর্তমানে ইটের এক দালান মন্দিরে দেবী স্বর্নময়ী বা স্বর্নমুখী পূজিত হন। মন্দিরটি নতুন ভাবে তৈরী হয়েছে। মন্দিরে সিঁদুরলিপ্ত দেবীর পাষান মূর্তির অবস্থান।  মূর্তিটি ভাঙ্গা ও বিকৃত। একটি জৈন তীর্থঙ্কর মূর্তিও মন্দিরে দেখা যায়। এই মূর্তিটিও দেবীর সাথে নিয়মিত পূজো পান। শোনা যায় কালাপাহাড় দেবীর নাক ভেঙ্গে দিয়েছিলেন।  বর্গী অধিনায়ক ভাস্কর রাও ষোড়শোপাচারে তাঁর পূজো দিয়েছিলেন।  এছাড়া মন্দিরে বাঁকুড়ার মাটির দুটি ঘোড়া ও দুটি হাতির মূর্তি আছে।





আঞ্চলিক উপাখ্যানগুলি পড়লে জানা যায় যে বহুকাল আগে এলাকাটি জঙ্গলে পরিপূর্ণ ছিল।    এক গরু সেই জঙ্গলের মধ্যে একটি অশ্বথ গাছের তলার দুগ্ধ দিতো তাই বাড়িতে দুধ পাওয়া যেত না।একদিন তাঁরা খোঁজ করতে এসে খোঁজ পান ওই গাছের নীচে এক দেবী মূর্তির।ঘোটকারূঢ়া দেবীমূর্তি।পরে ওই জঙ্গল সাফ করে চালা করে মা'র পুজো হয়।এর বহু পরে মন্দির হয়।কালাপাহাড় যখন হিন্দু মন্দির ধ্বংস করতে করতে আসেন তখন তিনি এই বিগ্রহের ওপর আক্রোশে ভেঙে ফেলতে চেষ্টা করেন।কিন্তু তাতে অক্ষম হয়ে রাগে মা'র নাকটি চেঁচে দেন।অর্থাৎ নাকভোঁতা করে দেন।এর বহুকাল পর এলাকাটি বর্ধিষ্ণু হলে জনৈক কেউ মা'র স্বর্ণমুখোশ করে দেন তাতেই নাম হয় স্বর্ণমুখী।কিন্তু কালক্রমে সেই সোনার মুখোশও আজ চুরি হয়ে গেছে।মা এখানে চতুর্ভূজা ঘটক পৃষ্ঠে আরূঢ়া অনেকটা যুদ্ধরত।মা'র চার হস্তে শঙ্খ চক্র বর ও অভয় (বর ও অভয় মুদ্রাটি ঠিক বোঝা যায় না)।মা চণ্ডীর ধ্যানে পূজিতা।মা'র দুই পাশে বুদ্ধদেব ও দুর্গা মূর্তি রয়েছে।




ঐতিহাসিকদের মতে সোনামুখী গ্রামের  জন্ম হয়েছিল সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে কোনও  এক সময়ে। জৈন ধর্মের প্রভাব,  মনোহর দাসের প্রসঙ্গ প্রভৃতি থেকে এই শহরের প্রচীনত্বের মাপ আন্দাজ করা যায়। পুথি থেকে জানা যায় যে সপ্তদশ শতাব্দীতে সোনামুখী এক তন্তুবায় প্রধান অঞ্চল ছিল।  ১৭৮৯ সালের এক রিপোর্টে জানা যায় সেই সময় এই এলাকায় তন্তুবায়দের বাসগৃহের সংখ্যা ছিল  প্রায় তিন হাজার  ও প্রায় চার হাজার তাঁতি তাঁত বুনতেন।


সোনামুখী থেকে সদর শহরের দূরত্ব ৪২ কি মি। আর বিষ্ণুপুরের দূরত্ব ৩৪ কি মি। এই দুটি শহরের সঙ্গে নিয়মিত বাস যোগাযোগ ছাড়াও দুর্গাপুর ও বর্ধমানের সঙ্গে বাস যোগাযোগ রয়েছে। সোনামুখীর চারপাশের প্রকৃতি এককথায় সুন্দর। নদীর ধার, জঙ্গল, মন্দির, উৎসব,মেলা, বিভিন্ন শিল্পকর্ম দেখতে দেখতে সোনমুখীতে দু একটা দিন কাটাতে আশাকরি ভালই  লাগবে।