অনাবিষ্কৃতপ্রায় , ঐতিহাসিক তাৎপর্যপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সংস্কৃতির বাহক ময়নাগুড়ির জটিলেশ্বর শিব মন্দির।
![]() |
মন্দিরের প্রধান গেট |
![]() |
মন্দিরের সন্মুখভাগ |
উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ি ব্লকে সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী অনেকগুলি মন্দির রয়েছে। এই তীর্থ ক্ষেত্রগুলির "জল্পেশ মন্দির " এবং " জটিলেশ্বর মন্দির " ভারত বিখ্যাত। ময়নাগুড়ি থেকে প্রায় ১১ কিমি দূরে চুরাভান্ডার গ্রাম পঞ্চায়েতের অধীন মল্লিকহাট এলাকায় রয়েছে জটিলেশ্বর মন্দির। তবে এই মন্দির কে গড়েছিলেন বা কবে তা তৈরি হয়েছিল তা আজও এক রহস্যের অন্ধকারে ঢাকা রয়েছে।
![]() |
বাবা জটিলেশ্বর |
ইতিহাস ঘাটলে মন্দির নির্মাণ সম্পর্কে যে সব তথ্য জানা যায় সেগুলি এই রকম। একদল গবেষক তাদের গবেষণার পর সিদ্ধান্তে এসেছেন যে এটি পাল যুগে তৈরি হয়েছিল। অন্য গবেষক দল জানিয়েছেন মন্দিরটি তৈরি হয়েছিল পালযুগের অনেক আগে অর্থাৎ গুপ্তযুগের আমলে। আবার প্রত্নতত্ত্ববিদরা প্রত্নতত্তিক উপাদান নিয়ে গবেষণার পর এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে এই মন্দিরের বয়স কমপক্ষে হাজার বছরেরও বেশি। কিংবদন্তিতে যাদের বিশ্বাস তাঁরা বলে থাকেন যে এই মন্দির ৩২০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে তৈরী হয়েছিল। সময়ের কারনে মন্দিরের দেওয়াল বারবার সংস্কারের ফলে মন্দিরের পুরানো ঐতিহ্য অনেকটাই মুছে গিয়েছে। তবু আজও এই মন্দির সেই পুরোনো দিনের মতই জটাজুটধারী শিবের উপাসনাস্থল হিসেবেই ভক্তদের কাছে বিশেষ ভাবে পরিচিত।
![]() |
মন্দির এলাকায় বিভিন্ন পাথরের মূর্তি |
গুপ্ত রাজবংশের দ্বারা নির্মিত হওয়ায় এই মন্দির বহু পুরানো ও বলা যেতে পারে উত্তরবঙ্গের প্রাচীনতম মন্দিরগুলির মধ্যে একটি। এইজন্য এর ঐতিহাসিক গুরুত্বের আধিক্য রয়েছে। বলা যেতে পারে ভারতের মধ্যযুগীয় স্থাপত্যের স্বতন্ত্রের প্রতীক। মন্দিরটি পাথর ও মাটির ইট ব্যবহার করে নির্মিত হয়েছিল। যদিও এটি ভগবান শিবের মন্দির, মন্দিরের দেওয়াল গুলিতে অন্যান্য হিন্দু দেবতার মূর্তি দিয়ে ভাস্কর্য করা হয়েছে। পাশেই রয়েছে লক্ষী-নারায়ন মন্দির। আর রয়েছে মা কালীর মন্দির। মন্দির এলাকায় প্রবেশের জন্য দর্শক প্রতি ৫ টাকা করে টিকিট কাটতে হয়। তবে একবার ভিতরে ঢুকলে পরে ঐ এলাকা জুড়ে এক শান্তির ছায়া পাবেন এবং ইচ্ছা হবে বট গাছের তলায় বসে কিছুটা সময় কাটাতে পারলে ভালো হতো।
জলঢাকা নদী বয়ে চলেছে এই মন্দিরের খুব কাছ দিয়ে। মন্দির ঠিক কতটা প্রাচীন এই তর্কে অংশ গ্রহণ না করে ভক্তরা আসেন জটিলেশ্বর মন্দিরে তাদের যাবতীয় কষ্ট থেকে মুক্তি পাবার জন্য। এই মন্দির অত্যন্ত জাগ্রত....... এটাই ভক্তদের গভীর বিশ্বাস। আর এই মন্দিরের দেবতা বাবা জটিলেশ্বর তার ভক্তদের খালিহাতে ফেরান না। ভোলানাথের কৃপায় এই মন্দিরে এসে বাবার কাছে চাইলে সে যতই কঠিন ও জটিল সমস্যাই হোক না কেন, ভক্তরা তা থেকে মুক্তি পান। এই বিশ্বাসের উপর ভর করে দেখা যায় যে বহু ভক্তই এখানে আসছেন বংশ পরম্পরায়।
বাগডোগরা বিমানবন্দর এখান থেকে ৮৫ কি মি। সেখান থেকে ভাড়ার গাড়িতে এখানে চলে আসতে পারেন। রেলে আসতে গেলে নিউ ময়নাগুড়ি ষ্টেশন থেকে ১৪ কি মি দূরে এই মন্দির। সঢ়কপথে ময়নাগুড়িতে এসে সেখান থেকে বাস বা ট্যাক্সি করে হুসলুরডাঙ্গা চলে আসুন। আর সেখান থেকে আরামে সহজে পৌচ্ছে যান মন্দিরে।
![]() |
মা কালীর মূর্তি |
![]() |
প্রাচীন বটগাছে মানত করা |
![]() |
মন্দিরের দেওয়ালে পাথরের মূর্তি |
জটিলেশ্বর মন্দিরকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে পর্যটন দফতর। রাজ্য পর্যটন দফতর চায়, ইতিহাস সমৃদ্ধ এই এলাকাটি সাধারণ পর্যটকের কাছে তুলে ধরতে। সেজন্য " ডুয়ার্স মেগা ট্যুরিস্ট " প্রকল্পের অধীনে এই মন্দির এনে ,পুরোনো কাঠামো অক্ষত রেখেই, পর্যটন মন্ত্রকের আর্থিক সহযোগিতায় মন্দির চত্বর ঢেলে সাজনো হচ্ছে। এমনিতেই ময়নাগুড়ি খুব সুন্দর জায়গা। এক দিকে তিস্তা আর এক দিকে জলঢাকা। পাশেই গরুমারা। ভ্রমনার্থীদের সুবিধার জন্য নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন থেকেই বাস পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে পর্যটন দফতর। এসব পরিকল্পনা সফল হলে তখন বলা যাবে ডুয়ার্স বলতে শুধুই জঙ্গল বা চা বাগান বা নির্সগতা বোঝায় না, ডুয়ার্স বলতে সুপ্রাচীন এক সভ্যতার নিদর্শন।