Wednesday, 17 July 2019

মা শীতলা দেবী, গ্রাম - সুগন্ধা, হুগলি।

মা শীতলা দেবী, সুগন্ধা গ্রাম, হুগলী।


হুগলি জেলার সুগন্ধা গ্রামে প্রচুর গাছ গাছালিতে ঘেরা আমবাগানের অন্ধকার ছায়ায় মা শীতলা দেবী অধিষ্ঠান করছেন। প্রাচীন এই শীতলা মা প্রায় চারশো বছরেরও বেশী দিন ধরে অন্ধকারে ছিলেন।

শোনা যায় বছর দশেক আগে গ্রামের কাউকে মা স্বপ্নে দেখা দিয়ে জানান দেন, যে তিনি ওখানে চারশত বছর ধরে আছেন। স্বপনাদিষ্ট ব্যক্তিটি পরের দিন সকালে গ্রামের কয়েকজনকে সে কথা বলেন। সেই থেকে গ্রামের লোকের তৎপরতায় চারপাশ পরিষ্কার করতে করতে মায়ের দেখা পান। কিন্তু মা যেখানে আছেন তার কাছাকাছি বেশ কিছুটা জায়গা পর্যন্ত, গাছ তো দূরের কথা, কোনোভাবেই কেউ লতাও ছিঁড়তে পারলেন না। যতবারই গাছ কাটতে চায়, ততবারই ঘটে যায় কোনো না কোনো দূর্ঘটনা। মায়ের মনোভাব বুঝতে ও জানতে পেরে , শেষে সকলে সিন্ধান্ত নেয় যে, মূল বেদীটি যেমন রাখা আছে তেমনই রাখা হবে। যে গাছে হাত দিলে মা অসুন্তষ্ট হন, তা বাদ দিয়ে পরিষ্কার করা হবে। এরপর থেকেই শুরু হয় স্থানীয় ব্যবসায়ী ও মানুষের সহায়তায় মাকে জনসমক্ষে আনার চেষ্টা।

এই ভাবে মাকে লোকচক্ষুর অন্তরাল থেকে জনসমক্ষে আনা হয়। এত সুন্দর নির্জন ছায়ায় একটি প্রসিদ্ধ স্থান আছে , আট দশ বছর আগেও এলাকার লোক সেভাবে জানতো না। শোনা যায় আগে গ্রামের কারো মায়ের দয়া হলে, জঙ্গল হাতরে ঝোপ সরিয়ে মায়ের থানের মাটি বা থান ধোয়া জল এনে রোগীকে দেওয়া হত। তারপর রুগী সুস্থ হলে মাকে সামান্য পূজো দিয়ে আসতো।

চুঁচুড়া ষ্টেশন থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত মায়ের এই স্থানে দিনের বেলাতেও লোক যেত না। যেতে হলে ভয়ে ভয়ে সকলে একসাথে যেত। যেখানে দিনের বেলায় লোক যেতে ভয় পেত, সেখানে এখন পাকা রাস্তা, বিদ্যুৎ এর আলো , সব কিছুরই সুন্দর ব্যবস্থা হয়েছে। তবে মূল বেদীটি ও মূল্ জায়গাটি যেমন ছিল তেমনই আকারে সংরক্ষিত আছে। পাশেই রয়েছে ছোট্ট একটা পুকুর। সেখানকার জল দিয়ে মায়ের সব কাজকর্ম হয়। জনৈক ব্যবসায়ী পুকুরটিকে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে দিয়েছেন।

প্রতিদিন তিন বার করে পূজা হয়। সকালে, দুপুরে ও সন্ধ্যায়। আর প্রতি আমাবস্যায় মায়ের বিশেষ পূজা হয়। ঐ দিন রাত্রে ভোগ খাওনোর ব্যবস্থা আছে। আবার মহা ধুমধাম করে প্রতি বৎসর ১৮ই চৈত্র মায়ের বাৎসরিক উৎসব বা পূজা হয়। আগে এখানে বলি প্রথা ছিল। এখন সেটা উঠে গেছে। বলি আর  হয় না। প্রায় কুড়ি থেকে পঁচিশ হাজার লোক সেদিন ওখানে মায়ের প্রসাদ গ্রহণ করে। সকাল থেকে রাত অব্দি ভোগ রান্না ও বিতরণ চলতে থাকে। ভোগ বলতে থাকে খিচুড়ি, একটা সবজি, চাটনি ও পায়েস। যে যতটা পারেন খেতে পারেন। আর বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইলে নিয়েও যেতে পারেন। তার জন্য কোনো কিছু দিতে হয় না। আশেপাশের দশ বিশটা গ্রামের কারো বাড়ীতে সেদিন রান্নার হাঁড়ি চরে না।এই বিশাল আয়োজনের আয়োজক হন এলাকার সাধারণ মানুষ আর আঞ্চলিক ব্যবসায়ীরা। নিজের নিজের ইচ্ছা মত সকলে এই কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করে। এখানে কোনো চাঁদার জুলুম নেই। যার যা সামর্থ্য মন্দিরে দিয়ে যান। এখানে কোনো রকম কোনো কিছু বাধ্যতামূলক নেই।

হাওড়া থেকে মেনলাইনের পান্ডুয়া, মেমারি, ব্যান্ডেল বা বর্ধমান লোকাল ধরে চুঁচুড়া ষ্টেশনে নামতে হবে। আপের দিকে মুখ করে সাবওয়ে দিয়ে নেমে বাম দিকে অটো, টোটো অথবা ১৭ / ১৮ নম্বর বাসে সুগন্ধা মোড়। আর গাড়িতে গেলে দিল্লি রোড ধরে সুগন্ধা মোড় পর্যন্ত যেতে হবে। আর যদি চুঁচুড়ার কাছাকাছি থাকেন তবে সাইকেল বা বাইকে যেতে পারেন। সুগন্ধা মোড় থেকে পাঁচ সাত মিনিট সোজা দোলতলার যাওয়ার রাস্তায় গেলেই পরবে একটা তিন মাথার মোড়। বামদিকে দোলতলা রেখে ডানদিকের রাস্তা ধরে গেলেই পরবে মা শীতলার মন্দির।



















Thursday, 4 July 2019

শ্রী শ্রী জোহরা চন্ডী দেবী, মালদা।

শ্রী শ্রী জোহরা চন্ডী দেবীর মন্দির, মালদা।

স্থানীয়রা একে জহরাতলা কালী মন্দির বলে থাকে। মালদা শহরের বাহিরে এক প্রান্তে এই মন্দির অবস্থিত। এক ধারে সবুজ মাঠ আর অন্য দিকে আমবাগানের মধ্যে অবস্থিত। বাংলাদেশ বর্ডার এর খুব কাছে।
কথিত আছে মূল মন্দির রাজা বল্লাল সেন তৈরি করেছিলেন, যিনি কিনা সেন রাজত্বের তৃতীয় রাজা ছিলেন। মালদার আদিশকতির মন্দির হিসেবে বিশেষ পরিচিত। এখানে দেবীর শুধু তিনটি মুখমণ্ডল দেখা যায়। দেহের অন্য অঙ্গ দেখা যায় না। এই মুখগুলি মা কালী, মহা লক্ষ্মী ও মহা সরস্বতীর বলে কল্পনা করা হয়। বৈশাখ মাসে রোজদিন এই মন্দির খোলা থাকে, কিন্তু অন‍্য মাসে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার খোলা হয় বেলা ১০ টার সময়। সপ্তাহের অন‍্যদিন বন্ধ থাকে। এখানকার সেবইত শ্রী তেওয়ারিদের অষ্টম পুরুষ এখন পূজার কাজ সম্পন্ন করে থাকে। বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুল ভক্ত সমাগম হয় বলে পূজা দিতে হলে হাতে অনেক সময় নিয়ে আসতে হয়।

















ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া