পিয়াসাড়ার সরকার জমিদার বাড়ি *"*"*"*'*"*"*"*"*"*
পিয়াসাড়া সরকার পরিবার হুগলি জেলার অন্যতম প্রাচীন জমিদার পরিবার। তাদের নবম প্রজন্ম এখন দেবী দুর্গার উপাসনার ঐতিহ্য বজায় রেখেছে। প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের পুরনো এই পূজো। শোনা যায় ইনাদের পূর্বপুরুষ শ্রী শরৎ চন্দ্র সরকার মহাশয় প্রথম দূর্গা পূজার প্রচলন করেন। এই জমিদার বাড়ির পূর্ব পদবী খাঁ ছিল। সিরাজদৌলার আমল থেকে খাঁ নামেই পরিচিত ছিল। পরবর্তী কালে বর্ধমানের মহারাজা সরকার উপাধি দেন এবং জমিদার বলে ভূষিত করেন।
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ..... এক সময় এনারা জমিদার ছিলেন বর্ধমান রাজার অধীনে। সেই সময় এই বঙশের এক জমিদার কর দিতে না পারায় বর্ধমানের রাজা ওনাকে কারাগারে বন্দী করে রাখেন। বন্দীদশায় কিছু দিন থাকার পর জমিদারবাবু অনশন শুরু করেন এই দু:কে যে তিনি না থাকলে পিয়াসারা জমিদার বাড়িতে দূর্গাপূজো হবে না। এই খবর রাজার কানে যায়। রাজা কথা বলেন জমিদারের সাথে এবং ওনাকে ছাড়েন এক শর্তে যে ফিরে গিয়ে দূর্গা পূজো করতে হবে। তখন মাত্র পূজোর সাতদিন বাকি। ঠাকুর এক মেটে হয়ে পরে আছে। রাজামশাই সাথে একজনকে পাঠান যিনি পুরো ব্যাপারটা দেখাশোনা করবেন। তারপর জমিদার ফিরে এলেন এবং যথারীতি মহাসমারোহে দূর্গাপূজা হ'ল। জমিদারের এমন ব্যবহার দেখে রাজা তখন জমিদারি নিষ্কর ঘোষণা করলেন এবং তারপর থেকেই সরকার বাড়ি খুব ভালোভাবে জমিদারি করতে থাকেন।
এই বাড়ীর দূর্গা ঠাকুর চার হাত বিশিষ্ট এবং একচালা, ডাকের সাজের। এই বৈশিষ্ট্যটির জন্য অন্যান্য পূজোর থেকে এটিকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। আগে এখানে ছাগ ও মহিষ বলি হতো। এখন এগুলি উঠে গেলেও এখন ছাঁচিকুমড়ো, আখ, আদা ও লেবু বলি হয়। এছাড়া সন্ধিপূজোতে দুটি পরাতের প্রতিটিতে এক থেকে দেড় মণ চাল ও তৎসহ আনাজ ও বিভিন্ন ফল সহ মাকে নিবেদন করা হয়। বাড়ীর কুলোদেবতা নারায়ন ও দেবী লক্ষ্মীকে পূজোর এই কটা দিন ঠাকুর দালানে আনা হয় এবং তার পর মায়ের পূজো আরম্ভ হয়। শোনাযায় অনেক আগে দূর্গা পূজার পর বাসন্তী পূজাও জমিদার বাড়িতে হতো। এখনও এ বাড়িতে গেলে নবম পুরুষের শ্রী বিশ্বনাথ সরকার বা শ্রী অশোক সরকারের মুখে সমস্ত ইতিহাস শোনা যায়।
এই সরকার বাড়ি হরিপালের কাছে। নিকটতম ল্যান্ডমার্ক ডানকুনি-চাপাডাঙ্গার রাস্তায় গজাড় মোর। এই মোর ছাড়িয়ে একটু এগুলে গোবরহারা হাই স্কুল। এই স্কুলের ঠিক উল্টো দিকের রাস্তা যেটা পঞ্চানন পাম্পের পাশ দিয়ে গিয়েছে সেটা দিয়ে সোজা এগুলে সরকার জমিদার বাড়িতে যাওয়া যায়।