~~দুর্গাপুরের রাঢ়েশ্বর শিবমন্দির ~~
দুর্গাপুরের আড়ায় অবস্থিত রাঢ়েশ্বর মহাদেব মন্দির আড়া শিব মন্দির নামেও পরিচিত। দূর্গাপুরে যে বারোটি নামকরা ধর্মীয় স্থান আছে তার মধ্যে এটি একটি। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে এটি প্রায় ১০০০ বছরের পুরোনো মন্দির। রাঢ় বংশের মহারাজা বল্লাল সেন কতৃক প্রতিষ্ঠিত। যেহেতু সেই সময় তাঁর রাজ্য এলাকাকে রাঢ় অঞ্চল বলা হত, তাই তাঁর প্রতিষ্ঠিত শিবকে রাঢ়েশ্বর শিব বলা হয়।
এই মন্দিরটি কাঁকসা থানার অন্তর্গত। রেখ দেউল পদ্ধতিতে পুরোটাই স্থানীয় বেলে পাথর ও ঝামাপাথর দিয়ে তৈরি এই সপ্তরথ মন্দির। মাথায় রয়েছে শিখারা যা অন্য কোনো মন্দিরে দেখা যায় না। কিন্ত বেশ কয়েকবার মন্দিরের সংস্কারের দরুন পূর্বের স্থাপত্য রীতি কিছুটা হারিয়ে গেছে। ধর্মীয় এবং প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন, দু দিক থেকেই এর অসীম গুরুত্ব রয়েছে। এখন এটি Archaeological Society Of India অধিগ্রহণ করেছে এবং তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। এই মন্দির থেকেই শুরু বিস্তীর্ণ জঙ্গলের। সেই জঙ্গল অজয় নদীর পাড় পর্য্যন্ত। অবশ্য বড় বড় গাছগুলি কেটে ফেলার ফলে জঙ্গলের ঘনত্ব অনেক কমে গিয়েছে।
লোককথা অনুযায়ী বলা যায় যে রাজা তখন দীর্ঘকাল ধরে এক জটিল রোগে ভুগছিলেন। যদিও তিনি রাঢ় অঞ্চলের অধিপতি, তবুও তিনি শষ্যাশায়ী। একদিন রাজা স্বপ্নে শিব দর্শন পান। শিবের কাছ থেকে আদেশ পান যে রোগমুক্ত হতে গেলে শিবের নামে মন্দির তৈরি করতে হবে। রাজা তখন শিব মন্দির তৈরি করলেন এবং নাম দিলেন রাঢ়েশ্বর শিব মন্দির। সেই থেকে আজও শিবের নিত্য পূজা হয়ে আসছে এই মন্দিরে।
আবার অন্য এক লোককথা এইরকম বলে থাকে............. গোপভূমের রাজাদের মধ্যে অগ্রগন্য ছিলেন ঈশ্বর ঘোষের প্রপিতামহ। সমগ্র রাঢ়ের অধিপতি হওয়ায় তিনি রাঢ়াধিপ বলে পরিচিত ছিলেন। দুর্গাপুরের রাঢ় গ্রামেই ছিল তাঁর রাজধানী। এই রাঢ়ভূমিই পরে লোকের মুখে মুখে রূপান্তরিত হয়ে আড়া নাম ধারণ করেছে। তিনি তাই নিজের রাজধানী অর্থাৎ বর্তমানের আড়াতেই শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা করনে। আর স্বভাবতই রাঢ় দেশে শিব মন্দির প্রতিষ্ঠা হওয়াতে মন্দিরের নাম রাখা হয় রাঢ়েশ্বর শিব মন্দির।
এই মন্দিরটির কারুকার্য পূর্বভারতের পাথর দিয়ে তৈরি মন্দিরের মধ্যে অন্যতম। মন্দিরটি চন্দ্র ও পাল আমলে প্রচলিত দেউল স্থাপত্যের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এটি একটি পীরা দেউল ধরণের গৌড়ীয় স্থাপত্য।
মন্দিরের ভিতরে অর্থাৎ গর্ভগৃহের পরিসর খুব অল্প। সেখানে পিনাক সমেত বিশালাকৃতির গ্রনাইট পাথরের তৈরি শিবলিঙ্গ একটি কূপের মধ্যে অবস্থান করছেন। শিবলিঙ্গের শৃঙ্গার করেন সেবাইতরা প্রতিদিন সকালে। এটিকে রুদ্র অভিষেক বলা হয়। তারপর পূজা ও আরতি হয়। সারাবছর এখানে ভীড় লেগে থাকলেও শ্রাবন মাসের প্রতি সোমবার পূজো দেওয়া ও শিবের মাথায় জল ঢালার জন্য আগের দিন রাত থেকে লাইন পরে যায়। বেলা যত বাড়তে থাকে , উপচে পড়ে ভক্তদের ভীর। ভক্তরা জল ঢালেন এবং অনেকে তার সাথে মানতও করেন। মানত পূরন হলে পরবর্তীকালে আবার এসে জল ঢালেন। এইসব ভীরের দিন পাঁচ ছয় পুরোহিত মিলে ভীর সামাল দেন।
মহা শিবরাত্রিতে এই মন্দিরে ভক্তদের ঢল নামে।সকাল থেকে মন্দিরে দূর থেকে ভক্তরা আসে। এই দিন এখানে শিব-পার্বতীর বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। শিবের বরযাত্রীরা পানাগড়ের বিশ্বকর্মা মন্দির থেকে পানাগড় দার্জিলিং মোড়ে অবস্থিত রাঢ়েশ্বর শিবমন্দিরে আসে ।এখানে শিব-পার্বতীর বিয়ে দেয়া হয়।বরপক্ষ ও কনেপক্ষের জন্য খিচুড়ি ভোগ দেয়া হয়। মাকুরি সপ্তমীতে এখানে বড় মেলা বসে। যা তিন দিন ধরে চলে। এই মেলা ১০০ বছরের ও বেশি পুরনো। এই মেলা এলাকার দশটি গ্রামের ঐতিহ্য।
দুর্গাপুর থেকে মুচিপাড়া হয়ে অজয় নদীর দিকে যেতে ৬ কি মি দূরে এই আড়া গ্রাম। আড়া-শিবপুরের এই রাস্তার উপরেই অবস্থিত প্রসিদ্ধ প্রাচীন রাঢ়েশ্বর শিব মন্দির। রেলপথে বা গাড়িতে দুর্গাপুর এসে টোটো বা অটোর সাহায্য নিয়ে সহজেই এখানে আসা যায়। রাঢ়েশ্বর শিবলিঙ্গ, প্রস্তর নির্মিত মন্দির ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ দেখে পন্ডিতরা অনুমান করেন যে এই স্থানই সম্ভবত কৃষ্ণ মিশ্র কথিত সেই সমৃদ্ধ নগরী রাঢ়াপুরী, যা আজ কালের গর্ভে বিলীন। স্থানীয় ঐতিহাসিকদের মতে আড়ারা বা আড়া, বামুননাড়া, গোপালপুর, রূপগঞ্জ, কালীগঞ্জ আর গড়ের জঙ্গলের একাংশ নিয়ে একসময় গড়ে উঠেছিল সমৃদ্ধ নগরী " রাঢ়াপুরী "।
পড়ে খুবই ভালো লাগলো। লেখা এবং ছবি দুটোই খুব সুন্দর। ..... শচী বিলাস রায়।
ReplyDeleteComment made by Mrs Sandhya Bose =====
ReplyDeleteলেখার সঙ্গে সঙ্গে ছবি ও মন্দির খুব ভালো লাগলো। জয় বাবা ভোলে নাথ।🙏🙏🙏
Comment of Mrs Meena Dey, Lukhnow::::::::
ReplyDeleteHar har mahadev
Comment of Mr Ranen Chakraborty --__--__--
ReplyDeleteKhub bhalo laglo
Comment made by Sri Amit Bhattacharya ---------
ReplyDeleteExcellent ....
পড়ে খুব ভালো লাগলো ছবি এবং বিবরন দুই খুব ভালো।
ReplyDeleteআবারও ধন্যবাদ।
কল্লোল বসু