Wednesday, 15 May 2019

শ্যামরূপা মায়ের মন্দির, দূর্গাপুর।

গড়ের জঙ্গলে শ্যামরূপা মায়ের মন্দির।


দূর্গাপুর শহর থেকে প্রায় ১৫  কি মি দূরে এক গহন গভীর জঙ্গলে প্রকৃতির কোলে ১০০০  বছরের পুরনো একদেবী মূর্তির পূজো হয় মহা সমারোহে। বর্ধমান জেলার অন্তর্গত অজয় নদীর তীরে বিষ্ণুপুর ও খেড়োবাড়ির মাঝামাঝি এই শ্যামরূপা গড়, সুখ্যগড় বা ঢেকুর গড়। দুর্ভেদ্য জঙ্গল। গড়ের জঙ্গলের বিশেষত্ব হল অলৌকিক তোপধ্বনি। দুর্গাপূজার অষ্টমীর সন্ধি পূজোতে তোপের আওয়াজ আর সেই আওয়াজ কোথা থেকে যে আসে, কি তার উৎস, কবে এর শুরূ , কি তার বৈজ্ঞানিক সত্যতা ...... তা কেউ জানে না। তাই তোপের আওয়াজ শুনতে আজও কাঁকসার গড় জঙ্গলের শ্যামরূপা মন্দিরের পূজোতে ভিড় জমান‌ হাজার হাজার মানুষ। তোপের আওয়াজের পরেই পাঁঠা বলি শুরু হয়। অষ্টমীর দিনে এখনো শাদা পাঁঠা বলি হয় এখানে। মানুষের  সামলাতে পূজোর এই চার দিন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয় এখানে।

মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তর নির্মিত সুদর্শনা দূর্গা মূর্তি। উচ্চতায় প্রায় দশ বারো ইঞ্চি। মন্দির প্রাঙ্গণে রয়েছে একটি হাড়িকাঠ। কথিত আছে এই জঙ্গলে এক সময় ছিল কাপালিকদের বাস। তারা রীতিমতো পূজো করতে দিতেন নরবলি। একবার অজয়নদের ওপারে অবস্থিত কেন্দুলি গ্রাম থেকে  " গীতগোবিন্দ " এর রচয়িতা কবি জয়দেব আসেন এই মন্দিরে। তিনি কাপালিককে প্রস্তাব দেন যদি তিনি তাকে চাক্ষুস মাতৃ দর্শন করাতে পারেন তবেই প্রমাণ হবে যে নরবলি দেবী গ্রহন করেন। যদি কাপালিক তা না পারেন তাহলে কবি তাঁকে শ্রীকৃষ্ণ বা শ্যাম রূপ দর্শন করাবেন। তবে তাতে শর্ত একটাই ... নরবলি বন্ধ করতে হবে। কবির এই প্রস্তাবে রাজি হলেন কাপালিক। চেষ্টা করলেন তাঁর উপাস্য দেবীকে দেখতে। ব্যার্থ হলেন। এরপর জয়দেবের ভক্তিপূর্ন আকূল প্রার্থনায় শ্যামামা শ্যাম রূপ ধারণ করে দর্শন দিলেন কাপালিককে। আনন্দ আবেগে কাপালিক লুটিয়ে পড়লেন কবি জয়দেবের চরনতলে। সেই থেকে মন্দিরে পূজিত দেবীর নাম হয় " শ্যামরূপা" দূর্গা আর বন্ধ হয় নরবলি।

এখানে মন্দিরে প্রতিদিন নিত্য সেবা হয়। মন্দিরের দুজন পূরোহিত, ভূতনাথ রায় ও দিলীপ রায় , প্রতিদিন বিষ্ণুপুর গ্রাম থেকে দু মাইল পথ অতিক্রম করে মায়ের পূজা অর্চনা করেন। প্রতিদিন মায়ের ভোগ প্রসাদ পাওয়া যায়। ভোগ প্রসাদ পেতে হলে আগেরদিন এই মোবাইল নং এ যোগাযোগ করতে হবে --৯৪৩৪৩৪৫১০৫ বা ৯৪৭৫৭৪৫৫৮৮ । দুর্গাপূজা, বাসন্তী পূজা, অক্ষয় তৃতীয়া, জন্মাষ্টমী ও বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন পূজো হয় এখানে। এছাড়া বিবাহ ও বনভোজন তো চলেই।

পিচরাস্তা থেকে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে মোরামের রাস্তা ধরে শ্যামরূপা মন্দিরে যাওয়ার রাস্তার অবস্থা জরাজীর্ণ। বর্ষাকালে রাস্তা জলে ভরে যায়। তবে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে গভীর জঙ্গলে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। যার ফলে স্থানীয়দের মুখে কিছুটা হাসি ফুটেছে।

দুর্গাপুর ষ্টেশন বা জি টি রোডের উপর মুচিপাড়া স্টপেজ থেকে গাড়ি ভাড়া নিয়ে মালানদিঘী যেতে হবে। সেখান থেকে ২ কি মি যাওয়ার পর দেখা যাবে " দেউল / শ্যামরূপা মন্দির " সাইনবোর্ড। সেখান থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৩  কি মি এগিয়ে গেলে মন্দির।

এছাড়া দার্জিলিং মোড় থেকে ১১- মাইল হয়ে  পশ্চিমে গেলে দেউলে পৌঁছে যাওয়া যায়। সেখান থেকে পথ নির্দেশ অনুযায়ী মন্দিরে যাওয়া যায়। এপথে‌ মন্দির দূরত্ব কমবেশি ১০ কি মি।



























No comments:

Post a Comment