Thursday, 16 May 2019

নন্দদিরঘি বৌদ্ধ বিহার, জগজীবনপুর, মালদা।

নন্দদিরঘি বৌদ্ধ বিহার, জগজীবনপুর, মালদা

মালদা জেলার হাবিবপুর ব্লকের ছোট্ট এক গ্রাম জগজীবনপুর।  কিছু কাল আগেও এটি  অচেনা নিতান্ত বাঙলার গ্রাম হিসাবে পরিচিত ছিল। কিছু দিন আগে এক চাষী তার চাষের কাজের জন্য মাটি খুঁড়ছিল। কোদালে এক শক্ত জিনিস আটকে যায় এবং বেরিয়ে আসে এক তাম্রলিপি। তাম্রলিপির উপরে ছিল রাজকীয় সিলমোহর। তার উপরে ছিল প্রস্ফুটিত পদ্মের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মচক্র , মাথায় ছত্র আর দুপাশে দুটি হরিণ। এগুলি সবগুলোই হল পাল বংশের প্রতিক। খবর পেয়ে আর্কিওলজিক‍্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া সেই ঢিবিতে খনন কার্য চালায়। তখনি প্রকাশ‍্যএ আসে বহু ইতিহাসের সাক্ষী সেই  " নন্দদিরঘি বৌদ্ধবিহার "।

তাম্রলিপিটি লম্বায় ৫২ সে মি, প্রস্তে ৩৭.৫ সে মি, পুরু ০.৫ সে মি আর ওজন ১১ কিলো ৮০০ গ্রাম। ফলকটির একদিকে সিদ্ধমাতৃকা লিপিতে খোদাই ছিল ৪০ লাইন, অন্য দিকে ৩৩ লাইন। প্রতিটি লাইনে ছিল ৫০ টি অক্ষর। নীচে লেখা " শ্রী মহেন্দ্র পাল দেব "। গবেষকদের মতে রাজা মহেন্দ্র পাল দেব মহাবিহার নির্মাণের জন্য এই জমি দান করেছিলেন। যে মহাবিহার পরে " নন্দদিরঘি বৌদ্ধমহাবিহার " নামে গোটা পৃথিবীতে পরিচিত হয়। তাঁরা আরও বলেন , এই মহাবিহার নালন্দা মহাবিহার থেকেও পুরনো ও বড়। এর পাশেই রয়েছে পুনরভবা নদী। নদীর ওপারে বাঙলাদেশের দ্বারপালেও এই বিহারের একটি অংশ মাটির নীচ থেকে উঠে এসেছে। অর্থাৎ এই বিহারটি প্রায় ৩ কি মি ব্যাসার্ধ নিয়ে তৈরি। তার সামান্য অংশই খনন হয়েছে। এখনও মাটির নিচে পড়ে রয়েছে আরও অনেক অজানা ইতিহাস।

২০১১ সালে রাজ‍্যসরকারের পালা বদলের পরে ২০১৪ সালে তৎকালীন পর্যটন মন্ত্রীর উদ্যোগে ঐ বৌদ্ধ বিহারে যায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ সঙগঠনের এক প্রতিনিধি দল। সেখানে মন্ত্রী মহাশয় জানান জগজীবনপুরকে জেলার পর্যটন মানচিত্রে স্থান দিয়েছে রাজ‍্যসরকার। সেখানে আধুনিক পর্যটনের সমস্ত পরিকাঠামো নির্মাণ করা হবে।

মালদা ইংরেজ বাজার থেকে প্রায় ৪১ কি মি  দূরে। মালদা থেকে প্রথমে নালাগোলা এবং তারপর নালাগোলা থেকে পাকুয়াহাট হয়ে কেন্দ্পূকুর। সেখান থেকে জগজীবনপুর। এছাড়া পাকুয়াহাট থেকে -- খিড়িপাড়া -- ১১ মাইল-- তপসাহার -- ডাললবাহাদুরপুর -- বাকাইল  হয়েও আসা যেতে পারে জগজীবনপুর।

এখন অনেকই চাইছেন, নন্দদিরঘি বৌদ্ধ মহাবিহারকে পুরোদস্তুর সাজিয়ে তুলুক সরকার। প্রতি সন্ধ্যায় গুরুগম্ভীর সুরে উচ্চারিত হোক  " বুদ্ধুঙ শরনঙ গচছামি, ধর্মঙ শরনঙ গচছামি, সঙঘঙ শরনঙ গচছামি " । আর সেই সুর অনুরণিত হোক এলাকাজুড়ে।















No comments:

Post a Comment